আজকের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর ২০২০ বিদায় নেবে। বছরটি পৃথিবীকে দিয়েছে ম’হামা’রীর তা’ণ্ডব, মৃ’ত্যুর মিছিল, কর্মহারা জীবন ও অনিশ্চিত ভবি’ষ্যৎ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই রাত পেরিয়ে ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। আর নতুন বছর নিয়ে মানুষ আশায় বুক বাঁধবে। ক’রোনামুক্ত ঝলমলে একটি বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পথচলা শুরু করবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে/ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে/আমায় তারা ডাকে সাথে- আয় রে আয়।/সজল করুণ নয়ন তোলো, দাও বিদায়…।’ সব বিদা’য়ের স’ঙ্গেই লুকিয়ে আছে আ’নন্দ-বেদনার কাব্য। ২০২০ বছর বিদা’য়ের ক্ষণেও সেই একই কথা বাজবে সবার অন্তরে। আজ রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিস্টীয় বছর ২০২১। আর ভোরবেলাতেই উদয় হবে নতুন বছরের নতুন সূর্য।
আমাদের জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয়, তাই খ্রিস্টীয় বছর বিশেষ গুরুত্ববাহী। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেল তার হিসাব কষবেন সবাই। ভালো-মন্দ, আ’নন্দ-বেদনার স্মৃ’তিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বি’ষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।
ফিরে তাকানও যাক কি ঘটেছিল ২০২০ সালে। বছরটি যখন শুরু হয়, তখন পৃথিবীর মানুষ নতুন ভবি’ষ্যৎ গড়ার সংকল্প করে। কিন্তু বছরের ২ মাসের মাথায় পৃথিবীর মানুষের সামনে আসে ভ’য়াবহ এক বি’পদ। চীনের উহানে প্রা’ণঘা’তী ভাই’রাস ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষের মৃ’ত্যুর খবরে বিশ্বজুড়ে আ’তঙ্ক তৈরি করে। নড়েচড়ে বসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
নানা ধরনের দিকনির্দেশনা দেয় দেশগুলোকে। এরপরই একে একে বন্ধ হতে থাকে বিমান চলাচল। অনেক দেশের সীমানা বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশ অভ্যন্তরীণভাবে লকডাউন দিয়ে নাগরিকদের সুরক্ষার চেষ্টা করে। এতেও কাজ চলছিল না। পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোতে বড় হতে থাকে মৃ’ত্যুর মিছিল। বিদায়ী বছরের শেষে এসে বিশ্বের প্রায় ১৮ লাখ মানুষের মৃ’ত্যুর খবর জানা যায়। আ’ক্রান্ত হন আট কোটিরও বেশি মানুষ।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় বিদায়ী বছরের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ ক’রোনা আ’ক্রান্ত হয়ে একজন মা’রা যান। স’রকারি হিসাবে ২০২০ সালে সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ মৃ’ত্যুবরণ করেন। মা’রা গেছেন বিভিন্ন অ’ঙ্গনের খ্যাতিমান বেশ কিছু মানুষ। ক’রোনার শুরুর দিকে বাংলাদেশেও লকডাউন ছিল। ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে পৃথিবীর অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো বাংলাদেশের মানুষও ‘নিউ নরমাল’ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এখন মৃ’ত্যুকে স’ঙ্গী করেই চলছেন তারা।
ক’রোনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমন কোনো জয়াগা নেই যেখানে ক’রোনার প্রভাব পড়েনি। কর্মহীন হয়েছেন দেশের অনেক মানুষ। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেকে বা’ধ্য হয়ে বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। ক’রোনায় বড় ক্ষ’তি হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। পুরোটা বছরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। নিচের ক্লাসেও পরীক্ষা ছাড়াই অটো প্রমোশনের সি’দ্ধান্ত হয়েছে।
ক’রোনার শুরুর হওয়ার পরপরই বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে চলে আসেন। এদের বড় একটি অংশ সৌদি প্রবাসী। এরাই পরে সৌদি ফিরতে গিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। এ কারণে রাজধানীতে তারা ব্যাপক বি’ক্ষো’ভ করেন। অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে ফ্লাইট চালু করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সবার ফেরা নিয়ে জটিলতা না কাটলে রাস্তায় নামেন তারা। সেই অনিশ্চয়তা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। ক’রোনার এ সময়ে স’রকার নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে, সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছে। প্রণোদনা কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।
ক’রোনা ম’হামা’রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ’ন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নেয়া বড় বড় সিরিজ কর্মসূচি পালনের পথে বা’ধা সৃষ্টি করে। কর্মসূচি সংক্ষি’প্ত করতে বা’ধ্য হন দায়িত্বপ্রা’প্তরা। জাতির পিতার জ’ন্মশতবর্ষের এ সুনীল সময়ে দেশের মানুষ উ’গ্রবা’দীদের তা’ণ্ডব দেখেছেন। হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাস্কর্যবি’রোধী বক্তব্য আসতে থাকে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বি’রুদ্ধে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী দলগুলোর আন্দোলনের মধ্যেই ৫ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাং’চুর করা হয়। ঘ’টনাটি পুরো জাতির মধ্যে ক্ষো’ভ সৃষ্টি করে।